নিজস্ব প্রতিনিধি, বুধবার, ০৫ জুন ২০২৪, আসানসোল: আসানসোল গুলি কাণ্ডে অভিযুক্ত কয়লা মাফিয়া জয়দেব মন্ডলকে চারদিন সিআইডি হেফাজতের পরে বুধবার আসানসোল আদালতে হাজির করা হয়। সিআইডি জয়দেবকে আরো ১০ দিনের হেফাজতে চাইছে, যাতে মামলায় আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়। আদালতে বিচারক অভিষেক মান্নার এজলাসে শুনানির সময় জয়দেবের আইনজীবী সোমনাথ চট্টোরাজ সিআইডির এই আবেদনের বিরোধিতা করেন এবং জামিনের আবেদন জানান।
তখন সরকারি আইনজীবী (পিপি) মনোজ সিনহা অভিযুক্তের আইনজীবীর আবেদনের বিরোধিতা করেন এবং মামলায় আরো তদন্তের জন্য জয়দেব মন্ডলকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার পক্ষে জোর সওয়াল করেন। শেষ পর্যন্ত শুনানি শেষে বিচারক অভিষেক মান্না জয়দেব মন্ডলের জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে চারদিনের জন্য সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পরে জয়দেব মন্ডলের আইনজীবী সোমনাথ চট্টোরাজ জানান, “আমার মক্কেল জয়দেব মন্ডলকে গুলি করে একজনকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে গত ১ জুন সিআইডি গ্রেফতার করে চারদিনের হেফাজতে নিয়েছিল। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সিআইডি আরো ১০ দিনের হেফাজত চায়। এই চারদিনে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে আমি এর বিরোধিতা করি। তবে বিচারক তার জামিন নাকচ করে আরো চারদিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৯ জুন তাকে আবার আদালতে পেশ করা হবে।”
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, জয়দেব মন্ডলকে এই ঘটনায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য উত্তরবঙ্গের কোনো জেলায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে। এ কারণেই তাকে আসানসোল আদালতে হাজির করে ১০ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর আসানসোলের একটি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। সেদিন, প্রকাশ্য দিবালোকে আসানসোল উত্তর থানার চন্দ্রচূড় মন্দিরের কাছে ১৯ নং জাতীয় সড়কে একটি হোটেলের সামনে ব্যবসায়ী দীনেশ গড়াইয়ের গাড়ি লক্ষ্য করে মোটরবাইকে আসা দুর্বৃত্তরা গুলি চালায়। দীনেশ গড়াই অভিযোগ করেছিলেন যে, তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনায় জয়দেব মন্ডলসহ বেশ কয়েকজন জড়িত ছিল।
প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যবসায়ীকে গুলি চালানোর ঘটনায় প্রথমে তদন্ত করছিল আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। পরে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তর সিআইডি এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব নেয়। ঘটনার দিন রাতে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া জয়দেব মণ্ডলের চার সঙ্গীকে সেই সময় রিমান্ডে নেয় সিআইডি। তাদের নাম হলো অভিষেক মুখোপাধ্যায়, টিঙ্কু কুমার প্রসাদ, পঙ্কজ কুমার সিং এবং কুলদীপ কুমার ওরফে কাল্লু।
কিন্তু, এই মামলায় মূল অভিযুক্ত জয়দেব মন্ডলকে খুঁজে পাচ্ছিল না সিআইডি। তাদের পক্ষ থেকে তার পলাতক থাকার কথা আসানসোল আদালতে সিজিএমের এজলাসে জানানো হয়। গত ৩০ এপ্রিল সেই ভিত্তিতে আসানসোল আদালত থেকে জয়দেবের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর গ্রেফতারি এড়াতে জয়দেব আইনজীবীর মাধ্যমে কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু সেই আবেদন হাইকোর্টের বিচারপতি খারিজ করে দেন।
এদিকে, গত ২১ মে আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে কয়লা পাচার মামলায় চার্জ গঠনের দিন চিকিৎসার অজুহাতে অনুপস্থিত ছিলেন জয়দেব মন্ডল। সেদিন সিবিআই আদালতে সিআইডির পক্ষ থেকে তাদের মামলার তথ্য দেওয়া হয়। সিআইডির অফিসাররা সেদিন জয়দেব মন্ডলকে ধরতে আসানসোল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু জয়দেব না আসায় তাদেরকে খালি হাতে ফিরতে হয়।
এরপর গ্রেফতারি এড়াতে জয়দেব গত ২৪ মে সুপ্রিম কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু সেখানেও তার আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তাকে এই মামলায় অবিলম্বে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তারপরও সে আত্মগোপনে ছিল।
শেষ পর্যন্ত, শনিবার জয়দেব মন্ডলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সিআইডি। জানা গেছে, সিআইডি এখন জয়দেবকে জেরা করে জানতে চাইছে, দীনেশ গড়াইয়ের গাড়ি লক্ষ্য করে কেন এবং কারা গুলি চালিয়েছিল। উল্লেখ্য, ১৯ নং জাতীয় সড়ক লাগোয়া জমি দখলকে কেন্দ্র করে গত বছর এই গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল বলে সিআইডি প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছে সিআইডি।