পোস্ট বর্ধমান ওয়েবডেস্ক, মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট ২০২৪, কালনা: কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে প্রসবের পর যদি কোনো নবজাতক অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে নার্স ও মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রায় ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত মহকুমা হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগে নিয়ে যেতে হয়। মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, রাতে এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরাপত্তার অভাবের সম্মুখীন হতে হয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দুই হাসপাতালের জন্য বড় এলাকা বরাদ্দ হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে।
বর্ধমান, নদিয়া, এবং হুগলি জেলার একাংশের মানুষকে সেবা দেয় এই দুটি কাছাকাছি অবস্থিত হাসপাতাল। মহকুমা হাসপাতালের ভেতরে একটি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে, যেখানে ২২ জন সিভিক ভলান্টিয়ার, একজন এএসআই, এবং তিনজন মহিলা কনস্টেবল পালা করে নজরদারি চালান। হাসপাতালের নিজস্ব ৩৬ জন রক্ষী এবং দুই হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে নজরদারির জন্য ৩২টি করে নজরদারি ক্যামেরা রয়েছে।
এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যাওয়ার জন্য একটি পায়ে হাঁটা পথ রয়েছে। রোগীদের মহকুমা হাসপাতালের প্রথম ফটক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করানো হয়, কিন্তু বাকি দু’টি দরজা দিনরাত খোলা থাকে। এর মধ্যে মর্গের দরজাটি ভাঙাচোরা অবস্থায় আছে। অভিযোগ উঠেছে, এই দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দরজা দিয়ে প্রায়ই নেশাগ্রস্ত যুবকরা যাতায়াত করেন। এছাড়া, মর্গের কাছেই রেললাইনের পাশে হাসপাতালের পাঁচিলের একটি অংশ ভাঙা, যা দিয়ে বাইরের লোকজন সহজেই হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশ করতে পারে।
১৯৯৪ সালে কালনা মহকুমা হাসপাতালের ভেতরে নকশাল নেতা হালিম শেখকে একদল দুষ্কৃতী গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে। সে সময়ের সাক্ষী কালনা শহরের বাসিন্দা মনোরঞ্জন সাহা স্মরণ করে বলেন, “বেশ মনে আছে, রাত ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছিল। দুষ্কৃতীরা কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। ওই ঘটনার পরে হাসপাতালের ভিতরে পুলিশ ক্যাম্প বসে। তবে এখনও কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিরাপত্তা যথেষ্ট পোক্ত নয়।”
রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের দাবি, হাসপাতালে হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশকর্মী থাকেন, যা নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন ছাড়াই অনেকেই ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েন, ফলে নিরাপত্তার ঘাটতি থেকে যায়। এতে বড় কোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, “সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সঙ্গে এসএনসিইউ বিভাগ থাকলে ভাল হত। রাতে সুপার স্পেশালিটিতে সদ্যোজাত অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে যেতে হয় মহকুমা হাসপাতালে থাকা ওই বিভাগে। সে সময়ে মেলে না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।”
রোগীদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সামনে জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ারদের অনেকেই মোবাইলে ব্যস্ত থাকেন। ফলে হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশকর্মীর পক্ষে দু’টি হাসপাতালের পুরো এলাকায় নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। নজরদারির অভাবে মাঝে মধ্যেই হাসপাতাল চত্বর থেকে মোবাইল, সাইকেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি হয়ে যায়। সম্প্রতি দেখা গেছে, একজন রোগীকে স্ট্রেচারে করে বিপজ্জনকভাবে এসটিকেকে রোড ধরে প্যাথলজি সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, যা যথাযথ নিরাপত্তার অভাবকেই নির্দেশ করে। এছাড়াও, হাসপাতালের চত্বরে দালালদের উৎপাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতালের সহকারী সুপার সামিম শেখ জানান, হাসপাতালের ভাঙা পাঁচিল দ্রুত মেরামত করার জন্য পূর্ত দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ১৭ অগস্ট হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে মহিলা কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হবে।