নিজস্ব প্রতিনিধি, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, চিত্তরঞ্জন: চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা (সিএলডব্লু) এবং রেল শহর চিত্তরঞ্জনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এই উদ্বেগের কারণে শহরের সীমানা প্রাচীরকে আরো মজবুত করার পাশাপাশি যেসব জায়গায় ‘পকেট গেট’ আছে, সেগুলি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে রেল ইঞ্জিন কারখানা কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। এখন থেকে শুধুমাত্র ১, ২ ও ৩ নম্বর গেট দিয়েই যাতায়াত করা যাবে। সোমবার থেকেই ২ নম্বর গেট সম্পূর্ণরূপে খুলে দেওয়া হয়েছে এবং চার চাকা সহ অন্যান্য যানবাহন এই গেট দিয়ে যাতায়াত করবে বলে কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কারখানার সিনিয়র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রমোদ ক্ষত্রি বলেন, “২০২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে একটি বিশেষ নির্দেশ চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে আসে। এতে বলা হয়, চিত্তরঞ্জন রেল শহরকে ঘিরে থাকা পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খন্ডে সাম্প্রতিক সময়ে উগ্রপন্থী কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্নভাবে আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতিরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নির্দিষ্টভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া, দুমকা, এবং ধানবাদ জেলা দুষ্কৃতিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চরমপন্থী কার্যকলাপ অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এইসব কারণের জন্য চিত্তরঞ্জন রেল শহর এবং রেল ইঞ্জিন কারখানা যথেষ্ট বিপদের সম্মুখীন। এতে রেলের সম্পত্তি নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে”।
রেল ইঞ্জিন কারখানার স্টিল ফাউন্ড্রি বিভাগ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় চিত্তরঞ্জনের কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এই উদ্বেগ স্থানীয় এলাকায় বিক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় মানুষজন সহজেই রেল শহরের পকেট গেট দিয়ে যাতায়াত করতে পারায় যে কোনো সময়ে গন্ডগোলের আশঙ্কা করছে চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এসব কারণের উল্লেখ করে, আগাম সতর্কতা হিসেবে অতি দ্রুত সমস্ত পকেট গেট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে থাকা পকেট গেটের অর্ধেক বন্ধ করা হয়েছে বলে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে রেল আধিকারিকরা জানান।
সাংবাদিকরা রেল আধিকারিককে প্রশ্ন করেন, নামোকেশিয়া সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদেরকে এর ফলে প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার ঘুরে চিত্তরঞ্জনে প্রবেশ করতে হবে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়াবে। এই প্রসঙ্গটি নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ চিন্তা ভাবনা করবে বলে ক্ষত্রী এদিন জানিয়েছেন।
রেল ইঞ্জিন কারখানার শ্রমিক সংগঠনগুলি শহরে প্রবেশের জন্য আরও দুটি নতুন গেট তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল, তবে রেল কর্তৃপক্ষ সেই বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। পকেট গেট বন্ধ হওয়ার ফলে কিছু মানুষের অসুবিধা হবে মেনে নিয়েও রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, শহর ও কারখানাকে পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখতে এই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা কর্তৃপক্ষ ১ নম্বর গেট থেকে চিত্তরঞ্জন রেল স্টেশন যাওয়ার রাস্তার দুদিকে থাকা দোকানদারদের আরও কিছুটা পিছনে সরে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছে। এতে রাস্তাটি সবসময় সুস্থভাবে চলাচলের উপযোগী থাকবে।