নিজস্ব প্রতিনিধি, বুধবার, ১২ জুন ২০২৪, রানীগঞ্জ: মঙ্গলবার রানীগঞ্জের সোনার দোকানে ডাকাতির তদন্তে কলকাতা থেকে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি ও ফরেনসিক বিভাগের আধিকারিকরা আসেন। দুপুর দেড়টা নাগাদ সিআইডির চার সদস্য ও ফরেনসিক বিভাগের তিন সদস্যের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। রানীগঞ্জ থানার পুলিশের উপস্থিতিতে তারা দোকানের বিভিন্ন অংশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তদন্ত চলাকালে তারা দোকান মালিক ও ঘটনার সময় থাকা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সামগ্রিক ঘটনা জানার চেষ্টা করেন।
তদন্তকারী দলের এক আধিকারিক পরে জানান, নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে। রিপোর্ট পাওয়া গেলে গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
রানীগঞ্জের ডাকাতির ঘটনায় দুদিনের মধ্যেই বেশ কিছু সফলতা মিলেছে। রবিবার রাতে ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঝাড়খন্ডের গিরিডি পুলিশ সরিয়া এলাকার জঙ্গল থেকে ডাকাতি করা বেশ কিছু হিরে ও সোনার গহনা উদ্ধার করে। এছাড়া, আসানসোল থেকে ডাকাত দলের ছিনতাই করা একটি হন্ডা ক্রেটা গাড়িও পাওয়া গেছে। রানীগঞ্জ থেকে একটি বাইক এবং আসানসোলের মহিশীলা কলোনি থেকে আরও একটি বাইক উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৪২ রাউন্ড তাজা কার্তুজও।
পুলিশ এই ঘটনায় যুক্ত বিহারের গোপালগঞ্জের বাসিন্দা সুরজ সিংকে গ্রেফতার করেছে। পরে গ্রেফতার করা হয় বিহারের সিওয়ানের কুখ্যাত সোনু সিংকে। জানা গেছে, এই দুই অপরাধী এর আগেও বিভিন্ন দুষ্কৃতীমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
ঝাড়খণ্ড পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুরজ ও সোনু সিংয়ের একটি বড় ধরনের অপরাধ চক্র রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বড় মাপের চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এবং খুনের অভিযোগও আছে। এবার সেই কুখ্যাত ডাকাত দল সুপরিকল্পিতভাবে রানীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে দিনে দুপুরে সোনার দোকানে ডাকাতি করে কয়েক কোটি টাকার গয়না নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল। আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের এক অফিসারের তৎপরতায় প্রাথমিকভাবে ডাকাত দলকে আটকানোর চেষ্টা কিছুটা হলেও সফল হয়।
তবে, এই ঘটনার পর আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের বেশ কিছু গলদ ও ফাঁকফোকর বেরিয়ে পড়েছে। ডাকাতি করার পরে ডাকাত দল যেভাবে আসানসোল হয়ে একটি গাড়ি ছিনতাই করে বাংলা থেকে ঝাড়খণ্ডে পালিয়ে যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ছিনতাই করা গাড়িতে জিপিএস থাকা সত্ত্বেও আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ সেটিকে ধরতে ব্যর্থ হয়। একাধিক জায়গায় নাকা চেকিং থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ডাকাত দলকে আটকাতে পারেনি। অথচ পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড পুলিশ সহজেই গাড়িসহ দুজনকে ধরে ফেলে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, একাধিক আইপিএস ও ডব্লুবিপিএস অফিসার এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের লাভ কী, যদি তারা অপরাধ আটকাতে ও অপরাধীদের ধরতে ব্যর্থ হয়?