নিজস্ব প্রতিনিধি, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের চারটি ব্লক রেমাল-রোষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেতুগ্রাম ১ ও ২, রায়না ২, এবং পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ৩১টি গ্রাম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এতে ২১৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রবিবার রাত থেকে তার ছিঁড়ে যাওয়া, ট্রান্সফর্মার ও সাব-স্টেশন বিকল হওয়ায় বহু এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ দীর্ঘ সময় বিচ্ছিন্ন ছিল। সোমবার সকালে মেমারিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সোমবারও টানা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় গোটা জেলা কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল।
জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক প্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলায় ৪৩টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পাঁচটি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৩৬ জন মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। জেলা, ব্লক, এবং পুরসভায় কন্ট্রোল রুম খোলা রয়েছে।”
পুলিশ জানায়, রায়নার মোগলমারি থেকে বাঁকুড়ার ইন্দাসে যাচ্ছিল একটি গাড়ি। খণ্ডঘোষের তোরকোনার কাছে ঝড়ে একটি বিদ্যুতের খুঁটি রাস্তায় উপড়ে পড়ে। চালক শেষ মুহূর্তে তা দেখতে পান, কিন্তু গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে পাশের সেচখালে পড়ে যান এবং আহত হন।
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৪.৩ মিলিমিটার। এই অবস্থায় বেশির ভাগ এলাকায় চাষিরা খেতে নামতে পারেননি। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার কারণে পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকের বেশির ভাগ তাঁত ঘরও বন্ধ ছিল। সমুদ্রগড়ের তাঁতি গোপাল বসাক জানান, “এই আবহাওয়ায় তাঁত বুনতে গেলে যন্ত্রে সুতো আটকে যায়। আমরা রোদ ওঠার অপেক্ষায় রয়েছি।” জেলা প্রশাসন জানায়, এ দিন সরকারি অফিস, পঞ্চায়েত, এবং পুরসভায় পরিষেবা নেওয়ার জন্য মানুষের ভিড়ও কম ছিল।
কালনা খেয়াঘাটে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। ট্রাক এবং গাড়ি ভেসেলে ভাগীরথী পার হয়। তবে রবিবার সন্ধ্যা থেকেই কালনা খেয়াঘাট বন্ধ ছিল। পরিষেবা বন্ধ থাকায় খেয়াঘাট লাগোয়া এলাকায় বড় বড় গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে। খেয়াঘাটের প্রতিনিধি জয়গোপাল ভট্টাচার্য জানান, ভাগীরথীতে বিপজ্জনক ঢেউ এবং দমকা হাওয়া থাকার কারণে ফেরি পরিষেবা বন্ধ ছিল। আবহাওয়ার উন্নতি হলে ফের পরিষেবা চালু করার কথা ভাবা হবে। কাটোয়া-বল্লভপাড়া, শাঁখাই, এবং মাটিয়ারি ফেরিঘাটও সকালের দিকে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল।
বর্ধমান শহরের বেশির ভাগ এলাকায় দোকানপাট বিকেল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায় কিছু দোকান খোলে। নবাবহাট, উল্লাস বাসস্ট্যান্ড, এবং বর্ধমান স্টেশন জনশূন্য ছিল। টাউন সার্ভিস বাসও কম চলেছে। কালনার চকবাজারে পাইকারি এবং খুচরো হাতে গোনা কয়েকটি দোকান খোলা ছিল, কিন্তু খরিদ্দারদের সংখ্যা ছিল কম। বেশ কিছু রাস্তায় জল জমে যায়, এবং কালনার ন’নম্বর ওয়ার্ডে বেশ কিছু বাড়িতে জল ঢুকে পড়ে।
এক টোটো চালক, মানস ঘোষ, বলেন, “সকালে বেরিয়েছিলাম। যাত্রী না মেলায় দুপুরেই ফিরে আসি।” গুসকরা এবং মেমারি শহরেও দোকানপাট বন্ধ ছিল। যাত্রী প্রতিক্ষালয়গুলোতে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়নি, এবং বাসস্ট্যান্ডে বেশির ভাগ বাস দাঁড়িয়েছিল। কাটোয়া এবং দাঁইহাটও কার্যত জনশূন্য ছিল। কাটোয়ার পুরপ্রধান সমীরকুমার সাহা বলেন, “আমাদের কর্মীরা সচেতন ছিলেন। কোথাও বড় ধরনের সমস্যা হয়নি। সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল।”
ভাতার ও মন্তেশ্বরে রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল এবং যানবাহন ছিল কম। গলসিতে রবিবার রাতে ঝোড়ো হাওয়া বইলেও বৃষ্টি হয়নি। সোমবার সকালেই শুধু বৃষ্টি হয়। তবে জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। কালনা ২ ব্লকের সাতগেছিয়া থেকে ভাতারের কুলচণ্ডা এবং বানেশ্বরপুরে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না। কাটোয়া শহরে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়। বিদ্যুৎ দফতর জানায়, রেমাল ঝড়ে অন্তত ৪০টি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে, প্রায় দেড়শোটি ফিডারের তার ছিঁড়ে গেছে এবং ১৪টি ট্রান্সফর্মার বিকল হয়েছে। এছাড়াও সাতটি সাব-স্টেশন বসে গেছে। দফতরের আঞ্চলিক ম্যানেজার (বর্ধমান) গৌতম দত্ত বলেন, “ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা হয়েছে।”