নিজস্ব প্রতিনিধি, শনিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৪, বর্ধমান: বর্ধমানের নান্দুরের ঝাপানতলায় ২৫ বছরের আদিবাসী যুবতী প্রিয়াঙ্কা হাঁসদার হত্যাকাণ্ডের ২ দিন পরেও অপরাধী ধরা পড়েনি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রিয়াঙ্কার পরিবার। শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার আমনদীপ এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান, ময়নাতদন্তে ধর্ষণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক ব্যানার্জির নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত দল (সিট) গঠন করা হয়েছে।
মেয়ের হত্যার নৃশংসতা বর্ণনা করতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন প্রিয়াঙ্কার মা, বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা প্রশ্ন করছেন, কেন এমন নৃশংসভাবে খুন হতে হলো তাঁদের মেয়েকে? কেন এখনও অপরাধী অধরা? প্রিয়াঙ্কার বাবা-মা দ্রুত অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে একাধিক আদিবাসী সংগঠনও এই দাবিতে আন্দোলনে সামিল হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসের দিন আদিবাসীরা বর্ধমান থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী ছাত্রছাত্রীরাও এই খুনের রহস্য দ্রুত উদ্ঘাটন এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছে।
পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষায় দর্শন নিয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এমএ করছিলেন। পাশাপাশি, তিনি বেঙ্গালুরুর একটি শপিং মলে সেলসের কাজও করতেন এবং প্রশিক্ষণের জন্য গত নভেম্বর মাসে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। গত সোমবার তিনি নিজের গ্রাম বাড়িতে ফিরে আসেন। বুধবার সন্ধ্যায় বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে মোবাইল নিয়ে বের হন প্রিয়াঙ্কা। অনেকক্ষণ পরও মেয়ে ফিরে না আসায়, তাঁর মা কাজল হাঁসদা বাথরুমে গিয়ে দেখেন প্রিয়াঙ্কা নেই। এরপর, মাঠের দিকে খুঁজতে গিয়ে বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যেই সবজির খেতে তাঁর গলার নলি কাটা দেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
এই ঘটনার পর, প্রিয়াঙ্কার বাবা সুকান্ত হাঁসদা বর্ধমান থানায় খুনের মামলা দায়ের করেন, এবং সেই মামলার ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করেছে বর্ধমান থানার পুলিশ। এদিকে, এই খুনের ঘটনা নিয়ে কোনো গুজব না ছড়ানোর জন্য পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়েছে।
শুক্রবার, জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান যে, ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় বর্ধমানের একটি ঘটনা নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু মহল থেকে ভুল তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তে ধর্ষণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এবং পরিবারের পক্ষ থেকেও এ ধরনের কোনো অভিযোগ করা হয়নি। খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি সুনির্দিষ্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে আসামি ওই যুবতীর পূর্ব পরিচিত। দ্রুত গ্রেপ্তার নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক ব্যানার্জীর নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, ১৪ আগস্ট রাতে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে নারী সমাবেশের সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।