নিজস্ব প্রতিনিধি, মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪, দূর্গাপুর ও আসানসোল: ঘটনার শুরু হয়েছিল অপহরণের অভিযোগ দিয়ে। তবে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই পুরো ঘটনাটি উল্টে যায়, জানা যায় অভিযুক্তকে ধরতে এসেছিল উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের। অভিযোগ উঠেছে, সাদা পোশাকে থাকা উত্তরপ্রদেশের পুলিশ আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশকে আগাম কিছু জানায়নি। যদিও উত্তরপ্রদেশের পুলিশ দাবি করেছে যে তারা গোপনীয়তার কারণে সাদা পোশাকে ছিলেন, তবুও আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ আগাম জানানোর অভিযোগ মানতে চায়নি। তবে, শেষমেশ দূর্গাপুরে শুরু হওয়া নাটকের সমাপ্তি ঘটলো আসানসোলে।
এদিকে, যাকে তুলে নেওয়া নিয়ে এত কিছু হচ্ছে, সেই যুবকের নাম মাখনলাল মিনা। তিনি রাজস্থানের বাসিন্দা এবং দূর্গাপুরের সিটি সেন্টার পোস্ট অফিসের কর্মী। জানা গেছে, মাখনলাল মিনা দুর্গাপুরের নবওয়ারিয়াতে পাঁচ বছর ধরে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন।
মঙ্গলবার সকাল দশটা নাগাদ, মাখনলাল মিনা ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে মোটরবাইকে করে কাজে যাচ্ছিলেন। তখন একটি ইনোভা গাড়ি তার বাইকে ধাক্কা মারে, এবং মাখনলাল মিনা পড়ে যান। এরপর ওই গাড়ি থেকে তিনজন নেমে এসে অভিযোগ করা হয়, তারা মাখনলাল মিনাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে আসানসোলের দিকে রওনা দেয়।
সেই সময় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা গোটা ঘটনাটি দেখে সিটি সেন্টার ডিএমসি মোড়ে ট্রাফিক গার্ড অফিসে খবর দেন। এরপরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। দুর্গাপুর থানার পুলিশ দ্রুত আসানসোলের বিভিন্ন থানার পুলিশকে গোটা ঘটনার কথা জানায়। আসানসোল জুড়ে শুরু হয় নাকা চেকিং, এবং এক ঘণ্টার মধ্যেই আসানসোল উত্তর থানার কন্যাপুর ফাঁড়ি এলাকায় ধরা পড়ে সেই ইনোভা গাড়ি।
Read more: দুর্গাপুরে প্রকাশ্যে পোস্ট অফিসের কর্মীর অপহরণ, চাঞ্চল্য
এদিকে, দুর্গাপুর থেকে আসানসোল পৌঁছায় পুলিশের একটি দল, এসিপি সুবীর রায় এবং দূর্গাপুর থানার ওসি প্রসেনজিৎ রায়ের নেতৃত্বে। কন্যাপুরে বেশ কিছুক্ষণ পর সেই ইনোভা গাড়ি, মাখনলাল মিনা, এবং নিজেদের উত্তরপ্রদেশের আগ্রার থানার পুলিশ পরিচয় দেওয়া একজন এএসআই ও দুই কনস্টেবলকে নিয়ে আসা হয় দুর্গাপুর থানায়।
উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা এক পুলিশ কর্মী জানান, মাখনলাল মিনা একটি অপরাধমূলক মামলার সঙ্গে জড়িত। অনেকদিন ধরেই তার খোঁজ চালানো হচ্ছিল। পরে জানা যায়, তিনি পশ্চিমবঙ্গের দূর্গাপুরে আছেন। তিন দিন আগে আমরা একটি গাড়িতে করে দুর্গাপুরে আসি এবং এদিন তাকে উত্তরপ্রদেশের আগ্রা থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
কিন্তু স্থানীয় পুলিশকে না জানিয়ে এবং সাদা পোশাকে কেন এই কাজ করা হলো? এই প্রশ্নের উত্তরে ওই পুলিশ অফিসার জানান, তাদের রাজ্যের পুলিশের তরফে আগেই এই রাজ্যের পুলিশকে জানানো হয়েছিল। সাদা পোশাকের ব্যাপারে তার দাবি, অভিযুক্ত যাতে তাদের চিনতে না পারে, তাই তারা সিভিল ড্রেসে ছিলেন। এদিকে, মাখনলাল মিনা সহ চারজনকে দুর্গাপুর থানায় দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পরে এই প্রসঙ্গে এসিপি (দুর্গাপুর) সুবীর রায় জানান, দুর্গাপুর থেকে যাকে তিনজন নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা উত্তরপ্রদেশের সাহারান থানার পুলিশ কর্মী। তাদের কাছে পরিচয়পত্র ছিল এবং আমরা আগ্রা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবকিছু জেনে নিয়েছি। মামলার নথি এবং সেখানকার আদালতের নির্দেশও ছিল। তবে অভিযুক্তকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পদ্ধতিতে ত্রুটি ছিল, যার ফলে ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছে। এখন আইন মেনে যা যা করা দরকার, তাই করা হবে।