পোস্ট বর্ধমান ওয়েবডেস্ক, শনিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৪, দুর্গাপুর: ‘জামতাড়া গ্যাং’ এখন আর শুধুমাত্র জামতাড়ায় সীমাবদ্ধ নেই। এই গ্যাং ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকাগুলিতেও। ঝাড়খণ্ড পেরিয়ে পশ্চিম বর্ধমানের খনি-শিল্পাঞ্চলেও তাদের কার্যকলাপ শুরু হয়েছে। আসানসোল, অন্ডাল এবং দুর্গাপুরে পরপর কয়েকজনকে জামতাড়া গ্যাংয়ের সদস্য সন্দেহে গ্রেপ্তার করার পর, পুলিশের একাংশের ধারণা এটাই।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, জামতাড়া গ্যাং মূলত মোবাইলে আসা ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) জেনে নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেয়। পুলিশ বারবার গ্রাহকদের ওটিপি গোপন রাখার বিষয়ে সতর্ক করছে, তবুও এই গ্যাং নতুন ফন্দি বার করে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। তদন্তকারীদের মতে, ইদানীং জামতাড়ায় পুলিশের নজরদারি বাড়ায় দুষ্কৃতীরা শুধু জামতাড়ায় সীমাবদ্ধ না থেকে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। ধরা পড়ার আগে পর্যন্ত, পাড়ার কেউ টের পাচ্ছে না যে, বাড়ি ভাড়া নিয়ে জামতাড়া গ্যাংয়ের কোনও সদস্য এলাকায় বসে এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
গত জুন মাসের মাঝামাঝি, আসানসোলের হিরাপুর থানার পুলিশ ইসমাইলের ষষ্ঠীনগরে একটি ভাড়া বাড়ি থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের মধ্যে প্রদুম যাদব ও সন্তোষ যাদব জামতাড়ার বাসিন্দা, আর বিনয় পাত্রের বাড়ি জামুড়িয়ায়। তাঁদের কাছ থেকে বেশ কিছু মোবাইল ফোন, লক্ষাধিক টাকা, বহু ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, এবং একটি মোটরবাইক উদ্ধার করা হয়। এর পরে, ২০ জুলাই রাতে অন্ডালের উখড়া সারদাপল্লির একটি ভাড়া বাড়ি থেকে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে মণীশ মণ্ডল ও সন্তোষ মণ্ডলের বাড়ি জামতাড়ায়, এবং অমর মণ্ডল নামে একজনের বাড়ি দেওঘরে। তাঁদের কাছ থেকেও বেশ কয়েকটি মোবাইল, ডেবিট কার্ড ও সিম কার্ড উদ্ধার হয়।
সোমবার গভীর রাতে, ঝাড়গ্রাম পুলিশ দুর্গাপুরের ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার ইছাপুরের একটি ভাড়া বাড়ি থেকে তিন যুবককে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের মধ্যে জামতাড়ার বাসিন্দা সরোজ দাস, তার শ্যালক দুর্গাপুরের অমরাবতীর বাসিন্দা আকাশ দাস, এবং আর এক আত্মীয় সরপি মোড়ের বাসিন্দা বিকাশ দাস। মোবাইলের ওটিপি জেনে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করার অভিযোগের তদন্তে ঝাড়গ্রাম পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগ তাদের খোঁজ পায়। অভিযুক্তদের কাছ থেকে প্রচুর মোবাইল, সিম কার্ড, এটিএম কার্ডসহ নানা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়। পুলিশের দাবি, সরোজ জামতাড়া গ্যাংয়ের সদস্য।
স্থানীয় বাসিন্দারা হতবাক, যখন জানতে পারেন যে জামতাড়া থেকে এসে প্রতারণা চক্র তাদের পাড়ার ভিতর থেকে পরিচালিত হচ্ছিল। তাঁরা বলছেন, পুলিশের নজরদারি বাড়ানো জরুরি, কারণ বহিরাগতরা এভাবে এসে অপরাধমূলক কার্যকলাপ চালালে পাড়ার শান্তি বিঘ্নিত হবে এবং নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়বে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের একজন আধিকারিক আশ্বস্ত করে বলেন, “পুলিশ নিয়মিত পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ইতিমধ্যে অনেক সাইবার অপরাধের তদন্তে সফলতা পেয়েছে। অনেক প্রতারিত ব্যক্তি তাদের টাকা ফেরতও পেয়েছেন। নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।” তিনি আরও জানান, সাইবার প্রতারণা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ ধারাবাহিকভাবে চলছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময়ে ভাড়াটেদের পরিচয় ভালোভাবে যাচাই করার বিষয়ে সচেতনতা কেন তৈরি হচ্ছে না।