নিজস্ব প্রতিনিধি, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রাণীগঞ্জ: শনিবার দুপুরে পশ্চিম বর্ধমানের রানীগঞ্জ শহরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। মাইনিং কলেজের পরিত্যক্ত ভবনের দেওয়াল ধসে চাপা পড়ে দুই যুবকের মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঘটে রানীগঞ্জ থানার বল্লভপুর ফাঁড়ির কাছে সাহেবগঞ্জ মোড় এলাকায়। নিহতরা হলেন কাঠগাদার বাসিন্দা সীতারাম বাউরি (২০) ও সাহেবগঞ্জের রাজীব দাস (১৯)। এই ঘটনায় পুরো রানীগঞ্জ শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা অভিযোগ করেছেন, ভবনটি কেন এখনো ভাঙা হয়নি, তা খতিয়ে দেখা উচিত। অন্যদিকে, এলাকার বাসিন্দা ও এগরা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের ভিন্নমত পাওয়া গেছে। ঠিক কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
রানীগঞ্জ থানার সাহেবগঞ্জ মোড় সংলগ্ন এলাকায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে, আর কিছু পরিত্যক্ত ভবন এখনো রয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো মাইনিং কলেজের পরিত্যক্ত ভবন, যেখানে শনিবার দুপুরে এক দুর্ঘটনা ঘটে। দুপুর প্রায় ২টা নাগাদ ভবনের একটি অংশের দেওয়াল ভেঙে পড়ে, যার নিচে বেশ কয়েকজন চাপা পড়ার খবর পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছায় রানীগঞ্জ থানার বল্লভপুর ফাঁড়ির পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল। জেসিবি মেশিন দিয়ে ভেঙে পড়া অংশ সরানোর কাজ শুরু হয়। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ইট-বালির নিচ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রাজীব দাস (১৯) ও সীতারাম বাউরি (২০) কে। দ্রুত তাদের আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে চিকিৎসকরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আর কেউ চাপা পড়ে আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেসিবি মেশিন দিয়ে পরিষ্কার অভিযান চালানো হয়, কিন্তু আর কাউকে উদ্ধার করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, রানীগঞ্জের এই এলাকায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বাইপাস রোড নির্মাণের জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। রাস্তা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে সেখানকার পুরনো বাড়িঘর সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। এরই মধ্যে মাইনিং কলেজের পরিত্যক্ত ভবনের একাংশ ভেঙে পড়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রিসভ হেলা জানিয়েছেন, নিহত যুবকেরা সেই পরিত্যক্ত ভবনের ভাঙা অংশ থেকে লোহার রড ও অন্যান্য সামগ্রী বের করতে গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সেই সময়ই ভবনের একাংশের দেওয়াল ভেঙে পড়ে, যার নিচে চাপা পড়ে তাদের মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে এগরা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সন্দীপ গরাই বলেন, “ওই দুই যুবক বাড়ির কাছে গিয়েছিল বলে জানতে পেরেছি। পরে দেওয়ালের নিচে চাপা পড়ে তাদের মৃত্যু হয়। কেন ভবনটি এতদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল, তা আমি বুঝতে পারছি না। গোটা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।”
অন্যদিকে, আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দেওয়াল ধসে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। রবিবার আসানসোল জেলা হাসপাতালে তাদের ময়নাতদন্ত করা হবে।